হাঁসের ডিম খাওয়ার নিয়ম

হাঁসের ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা

হাঁসের ডিমের উপকারিতা পুষ্টিকর খাবার হিসাবে ডিম আমাদের একটি পরিচিত খাবার। একটি ডিমে প্রায় সব ধরনের পুষ্টি উপাদানে ভরপুর থাকে। ডিমকে প্রোটিন ও পুষ্টি উপাদানের শক্তি ঘর বলা হয়। মুরগির ডিম আমরা খুব সহজে খেলেও, হাঁসের ডিমের বেলায় কোথাও যেন একটা সন্দেহ থেকেই যায়। কারণ ছোট থেকে মুরগির ডিমের বহু প্রশংসা শুনলেও হাঁসের ডিমের সাথে আমরা খুব কমই পরিচিত।

প্রথমত হাঁসের ডিম এবং মুরগির ডিমের স্বাদ, এবং গন্ধ প্রায় একই রকম। দেখতেও প্রায় একই রকম হলেও হাঁসের ডিম মুরগির ডিমের তুলনায় একটু বড়। এর খোসা তুলনামূলক শক্ত ও মোটা হওয়া হাঁসের ডিম সহজে নষ্ট হয় না। এবং কোন প্রকার ফ্রিজে না রেখে প্রায় ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত রেখে খাওয়া যায়। পৃথিবীর যেকোনো খাবারই হোক না কেন, প্রত্যেকটির উপকারিতা পাশাপাশি অপকারিতা থাকবেই। তাই হাঁসের ডিম হাঁসের ডিম ও এর ব্যতিক্রম না, তাই হাঁসের ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা দুইটা আছে।

হাঁসের ডিমের উপকারিতা

হাঁসের ডিমের উপকারিতা

হাঁসের ডিমের উপকারিতা ও পুষ্টি সম্পর্কে জেনে নিন। হাঁসের ডিমে কি কি উপকার পাওয়া যায়? হাঁসের ডিমের বিভিন্ন ধরনের উপকার রয়েছে বিস্তারিত নিচে দেওয়া হয়েছে।

হাঁসের ডিম কত ক্যালরি থাকেঃ

একটি সাধারণ মাপের হাঁসের ডিমে থাকে – ১৮১ কিলোক্যালরি, প্রোটিন ১৩.৫ গ্রাম, ফ্যাট ১৩.৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৭০ মিলিগ্রাম, লোহা ৩ মিলি গ্রাম, ভিটামিন এ ২৬৯ মাইক্রোগ্রাম। ডিম দেহের শক্তি যোগান দেয়। আমাদের প্রতিদিনের কাজকর্ম করার জন্য চাই প্রচুর  শারীরিক শক্তি। সকালে একটি মাত্র হাঁসের ডিম আপনাকে সারাদিন শক্তি জগতের সাহায্য করবে।

আপনি যদি প্রচুর ব্যাম করেন বা GYM করেন, তাহলে হাঁসের ডিম আপনার জন্য একটি আদর্শ খাবার। এটি আপনাকে আরো বেশি ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করতে শক্তি যোগান দেবে। ডাক্তাররা ব্যায়াম করার পরে ডিম খাওয়ার কথা বলেন। হাঁসের ডিমের প্রচুর পরিমাণ “ভিটামিন বি” থাকে যা গ্রহণকৃত খাবারকে এনার্জিতে পরিণত করে এবং সেই এনার্জির দীর্ঘ সময় ধরে রাখে।

ডিম প্রোটিনের উৎসঃ

আমাদের দেহের কিছু অতি প্রয়োজনীয় উপাদানের মধ্যে একটি হলো প্রোটিন। আর প্রোটিনের খুব ভালো একটি উৎস হলো হাঁসের ডিম। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়। প্রোটিনের পাশাপাশি এতে থাকা ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরের হাড়কে শক্ত এবং মজবুত করে। আমাদের দাঁত মজবুত করে এবং ভালো রাখে। এবং শিশুদের মস্তিষ্ক বিকাশ সাহায্য করে।

হার্ট ভালো রাখেঃ

হাঁসের ডিম হার্টের মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা প্রদান করে। যা সারা শরীরে সঠিকভাবে রক্ত চলাচল করতে সাহায্য করে।

হাঁসের ডিম চোখের সমস্যা সমাধান করেঃ 

আমাদের চোখ হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। চোখ ভালো রাখতে অনেক রকম ভিটামিন দরকার তাদের মধ্যে ভিটামিন-এ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-এ। ডিমে থাকা কেরোটিনয়েড ও ল্যুটেন বৃদ্ধ বয়সে ম্যাকুলার ডিজেনারেশন হওয়ার সম্ভাবনা কমায় এবং চোখের জ্যোতি বাড়ায়।

পিরিয়ড়ের সময় হাঁসের ডিম খাওয়াঃ

মেয়েদের পিরিয়ডের সময় হাঁসের ডিম খাওয়া খুবই ভালো। কারণ এই সময় অতিরক্ত যাওয়ার ফলে মেয়েদের অ্যানামিয়া হয়। আর ডিমে থাকা আয়রন অ্যানামিয়া প্রতিরোধ করে।

হাঁসের ডিম কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করেঃ

হাঁসের ডিম আমাদের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। আমাদের দেহে দুই ধরনের কোলেস্টেরল পাওয়া যায়। একটি খারাপ কোলেস্টেরল অন্যটি ভালো কোলেস্টেরল। হাঁসের ডিম খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে শরীর ভালো কোলেস্টেরল পরিমান ঠিক রাখে।

হাঁসের ডিম কোলাইনের একটি উৎসঃ

আমাদের সার্বিক সুস্থতা কোলাইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেহে কোলাইনের ঘাটতি হলে লিভারের সমস্যা হয়। ডিমে প্রায় ৩০০-৪০০ গ্রাম কোলাইন থাকে। তাই ডিম লিভার, স্নায়, এবং যকৃত ভালো রাখে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ করেঃ 

হাঁসের ডিম ওজন নিয়ন্ত্রণের খাবার হিসেবে খুবই ভালো কাজ করে। অনেক সময় খেতে বেশি থাকার কারণে আমরা বেশি খেয়ে ফেলি। সাধারণত বেশি খাওয়ার কারণে ওজন বৃদ্ধি পায়। কিন্তু ডিম আমাদের খিদে কমিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে। তাই ডিম খেতে পারেন ওজন ঠিক রাখার জন্য।

হাঁসের ডিম আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ডিমে থাকা প্রচুর জিংক আমাদের দেহে ইমিউনিটি শক্তিশালী করে। সর্দি, কাশি, জ্বরসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করতে ডিম খাওয়া দরকার। তাই আমাদের দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ডিমের ভূমিকা রয়েছে। আলোচিত সকল উপকারিতা আপনি সিদ্ধ হাঁসের ডিম বাজা তরকারি, যেভাবে খান না কেন আপনি উপকৃত হবেন।

হাঁসের ডিমের ক্ষতিকর দিক

হাঁসের ডিম খাওয়ার নিয়মঃ 

হাঁসের ডিম খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২টি বা ১টি বা একদিন পর পর ১টি করে ডিম খাওয়া ভালো। সাধারণত ব্যায়াম করার আগে ১টি এবং ব্যায়াম করার পর একটি খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। আবার দিনের শুরুতে একটি হাঁসের ডিম খাওয়া অনেক ভালো। আপনার ওজন যদি কম থাকে তাহলে রাতে ঘুমানোর আগে ১টি হাঁসের ডিম খেলে ওজন বাড়বে।

হাঁসের ডিমের ক্ষতিকর দিকঃ

হাঁসের ডিমের ক্ষতিকর দিক বলতে কোন কিছু অতিরিক্ত খাওয়া ভালো না। ঠিক তেমনই অতিরিক্ত হাঁসের ডিম খাওয়া মোটেই ভালো না।প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২টি বা ১টি বা একদিন পর পর ১টি করে ডিম খাওয়া ভালো। অতিরিক্ত ডিম খেলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এবং খারাপ কোলেস্টেরলে হৃদরোগের কারণ। ডিম পরিমিত খাওয়ার মাধ্যমে আপনি স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে বেঁচে থাকতে পারেন। সন্দেহে হাঁসের ডিমের উপকারিতা অনেক। তবে কিছু উপকারিতা ও আছে।

হাঁসের ডিমের দাম ২০২৩

হাঁসের ডিমের দাম বর্তমানে অনেক বেশি। তবে মুরগির ডিমের তুলনায় হাঁসের ডিমের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। চলুন জেনে নেই হাঁসের ডিমের দাম সম্পর্কে।

  • একহালি হাঁসের ডিম ৭০ টাকা।
  • এক ডজন হাঁসের ডিম ২১০ টাকা।
  • ১০০ টি ডিমের দাম ১৭,০০ টাকা।

প্রতিদিন হাঁসের ডিম খেলে কি হয়

হাঁসের ডিমে থাকা ভিটামিন বি ১২ হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও হাঁসের ডিমের প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ রয়েছে, যা দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় এবং রক্ত ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখে। এতে থাকা সেলিনিয়াম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তারপর হাঁসের ডিম রিবোফ্লাভিন সমৃদ্ধ, যা একটি শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট। তবে অতিরিক্ত হাঁসের ডিম খাওয়া একদমই ভালো নয়।

হাঁসের ডিম ও মুরগির ডিমের পার্থক্য?

মুরগির ডিমের তুলনায় হাঁসের ডিম আকারে একটু বড় হয়। পুষ্টির দিকে তুলনায় হাঁস এবং মুরগির ডিম প্রায় একই বলা যায়। যেমন প্রতি ১০০ গ্রাম হাঁসের ডিমে রয়েছে ১৮১ কিলোক্যালরি খাদ্য শক্তি আর প্রতি ১০০ গ্রাম মুরগির ডিমে রয়েছে ১৭৩ কিলোক্যালরি খাদ্য শক্তি।

হাঁসের ডিম খেলে কি প্রেসার বাড়ে?

অতিরিক্ত ডিম খেলে প্রেশার বাড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে এবং উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ও হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে। তবে আপনার যদি প্রতিদিন দুটি করে ডিম খান তাহলে প্রেসার বাড়বে না। যাদের এই রোগ গুলোয় ভুগছেন, তারা সিদ্ধ ডিম না খেয়ে বাজা ডিম খাবেন।

হাঁসের ডিমে কি এলার্জি আছে?

হাঁসের ডিম এলার্জি আছে। তবে এলার্জি যেকোনো ব্যক্তির যে কোন খাবারে হতে পারে। এখন কথা হল কোন খাবারে কার এলার্জি আছে সেটা সেই ব্যক্তিকে নির্ধারণ করতে হবে। যদি কোন ব্যক্তি হাঁসের ডিম খাওয়ার পরে তার শরীরে এলার্জি কোনো উপসর্গ দেখা না যায় তাহলে বুঝতে হবে হাঁসের ডিমে তার এলার্জি নেই। এবং যাদের শরীরে চর্মরোগ আছে তাদের ডিম এবং বেগুন এগুলো খাওয়া একদম ঠিক নয়।

শেষ কথা

হাঁসের ডিমের উপকারিতা সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত দেওয়া হয়েছে আশা করি আপনারা হাঁসের ডিম সম্পর্কে যা যা তথ্য খুঁজে থাকেন সম্পূর্ণ বিস্তারিত এই আর্টিকেলে পেয়েছেন।

About The Author

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 + 1 =

Scroll to Top
MENU
AjkeritWeb